কিডনি রোগের কারণ লক্ষণ ও তার প্রতিকার গুলি কি কি?

কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার , কারণ

কিডনি সুস্থ দেহের জন্য একটি অপরিহার্য অঙ্গ। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের উদরের পেছনের দিকে একজোড়া সিমের মতো অঙ্গকে কিডনি বলে । কিডনির কাজ হলো আপনার শরীরের ব্লাড ফিল্টার করা, বর্জ্য নিষ্কাশন, শরীরের ফ্লুইডকে ব্যালান্স করা, জল ও তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ বা ইলেকট্রোলাইটের (সোডিয়াম, পটাসিয়াম ইত্যাদি) ভারসাম্য বজায় রাখে এবং অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসাবে কাজ করে। আপনার শরীরের সমস্ত রক্ত সারাদিনে ৪০বার তাদের মধ্য দিয়ে যায়। আজকে এই প্রবন্ধে কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার ও কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায় আলোচনা করা হয়েছে।

আজ আমাদের চারপাশের আপনজনেরা যে প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন তার মধ্যে কিডনি রোগ অন্যতম। এই কিডনি রোগ খুব নীরবে শরীরের ক্ষতি করে, তাই একে সাইলেন্ট কিলার বলা হয়। খুব জটিল অবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত লক্ষণগুলো ভালোভাবে প্রকাশও পায় না। তাই কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো আগে থেকেই জেনে রাখলে আমরা নিজেদের কে এই মারণ রোগের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবো।

আপনি কি জানেন, আমাদের কিডনি 70-80% বিকল হয়ে যাওয়ার পর , আমাদের বায়- বায় করে দেয়। অর্থাৎ অনেক সময় চিকিৎসার সুযোগ দেয় না। তাই নিজেদেরকে আগে থেকে সুরক্ষার বলয়ের মধ্যে ঢুকে যেতে হবে।

বিভিন্ন গবেষণা সূত্রে দেখা যাচ্ছে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে কিডনি রোগের প্রকোপ বেশি এবং আগামী ১৫-২০ বছরে এ হার বাড়তেই থাকবে। গবেষণা আরও বলছে, ২০৪০ সাল নাগাদ কিডনি রোগ হবে পৃথিবীতে মৃত্যুর পঞ্চম কারণ। তাই কিডনি রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন দেশের সরকার ও প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে।

মারাত্মক যেসব অসুখের রোগীর সংখ্যা দিনদিন আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিডনির সমস্যা তার মধ্যে অন্যতম। কিডনি আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। পাঁচটি ধাপে কিডনি বিকলের দিকে অগ্রসর হয়। প্রথম চারটি ধাপ পর্যন্ত চিকিত্‍সার মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব। কিন্তু একবার পাঁচ নম্বর ধাপে চলে গেলে তখন বেঁচে থাকার উপায় হলো ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজন। এসব পদ্ধতি অত্যান্ত ব্যয়বহুল, যা অনেকের পক্ষেই বহন করা সম্ভব হয় না। তাই এই ব্যাধি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো কিডনি বিকলতা প্রতিরোধ করা।

আরো পড়ুন : মুখের দুর্গন্ধ দূর করার কার্যকর উপায় Ways to Get Rid of Bad Breath

কিডনি রোগের কারণ Causes of Kidney Disease in Bengali

আনহেলদি কাজকর্মের জন্য আমরা আমাদের বিপদকে ডেকে আনি এবং এরফলে অনেকগুলো রোগের আবির্ভাব ঘটে, যার শেষ পরিনতি এটি। সেই রোগগুলো প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করা সম্ভব। কিডনি রোগের প্রধান কয়েকটি মূল কারণ নিম্নে দেওয়া হলো- Why kidney disease?

১. ডায়াবেটিস High blood Sugar :

আমরা যারা ডায়াবেটিস আক্রান্ত তাদের কিডনি বিকল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশিথাকে তার কারণ কিডনি অতিরিক্ত সুগরকে ফিল্টার করতে পারে না যার ফলে খুব তাড়া তাড়ি কিডনি নিজের কার্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

ডায়াবেটিস রোগী, কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে তা বেশ জটিল হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীর একবার কিডনি রোগ হয়ে গেলে, এটি পুরোপুরি নিরাময় করা যায় না। তবে রোগ যেন ধীরগতিতে অগ্রসর হয়, সে চেষ্টা করা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ প্রতিরোধযোগ্য।

যখন একজন মানুষের ডায়াবেটিস ধরা পড়ল, তখন থেকেই তাকে বুঝতে হবে যে, ডায়াবেটিসের একটি গুরুতর জটিলতা হচ্ছে কিডনি রোগ। এরজন্য নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে এবং নিয়ম-কানুন মানতে হবে। একজন ডায়াবেটিস রোগীর যখন কিডনি রোগ ধরা পড়ে তখন অন্যান্য জটিলতাগুলোও শুরু হয়, যেমন- একজন মানুষ ডায়াবেটিসের জটিলতায় অন্ধত্ববরণও করতে পারেন।

কিন্তু আশার কথা হলো, ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। শুরু থেকে ডায়াবেটিস রোগীরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে কখনোই তাদের ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ হবে না। পৃথিবীর অনেক দেশে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা হয়েছে। দেখা গেছে, ডায়াবেটিস ধরা পড়ার সাথে সাথে যারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, তারা ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগের প্রকোপ শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ থেকে ৫ ভাগে নামিয়ে নিয়ে এসেছেন।

তাই ডায়াবেটিস রোগীরা তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবেন।

২. High blood pressure / Hypertension :

আমাদের অনেক প্রিয় জন যারা এই হাই ব্লাড প্রেসার/ হাইপারটেনশন ভোগেন, তাদেরকে মনে করিয়েদি আজ কিডনি ফেইলিওর আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে এই সমস্যাটিকে লক্ষ করা গেছে।বহুদিন ধরে বাসা বেঁধে থাকা এই সমস্যটি আমাদের কিডনিকে Chronic kidney disease রূপান্তরিত করে।

প্রয়োজনে এসিই ইনহিবিটর গোত্রের ওষুধ খাবেন। তাই উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিয়মিত তাদের চিকিত্‍সকের মাধ্যমে কিডনি পরীক্ষা করাবেন।

৩. মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের সেবন-Excessive Drug Use :

আমরা এখন সবাই ওষুধের সম্পর্কে কমবেশি জানি।তাই রাত-বিরেতে কিছু হাওয়ার আগেই ওষুধ সেবন করা শুরু করেদি। আপনারা জেনে রাখবেন আজ আমরা যে ওষুধ খাচ্ছি তার প্রত্যেকটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। হয়তো রোগীর রোগ ভালো হয়ে যায় কিন্তু ওই রোগ ভালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আরো কিছু রোগ বিনামূল্যে পেয়ে থাকি। যদি এটি বিশ্বাসযোগ্য না হয় আপনারা নিজেরাই যে ওষুধ সেবন করছেন তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া GOOGLE search করে দেখে নিন। অতিরিক্ত pain killer খাওয়ার ফলে। শরীরে টক্সিন পরিমাণ বেড়ে যায় কিন্তু এই অত্যাধিক টক্সিন কিডনিকে বিফল করে দেয়।

তাই দয়া করে ডাক্তার বাবুর সঙ্গে পরামর্শ না করে মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবন করবেন না।

৪. মদ্যপান Alcohol Consumption :

যখন আপনি অ্যালকোহল পান করেন, তখন আপনি অ্যালকোহল হজম করেন না। এটি দ্রুত আপনার রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে এবং আপনার শরীরের প্রতিটি অংশে ভ্রমণ করে। অ্যালকোহল প্রথমে আপনার মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে, তারপর আপনার কিডনি, ফুসফুস এবং লিভারকে।অ্যালকোহল কিডনির কার্যকারিতায় পরিবর্তন আনে এবং তাদের রক্ত পরিশোধনে বাধা দেয়। অ্যালকোহল শরীরের তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইট নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে। যখন অ্যালকোহল শরীরকে ডিহাইড্রেট করে (শুকিয়ে যায়), শুকানোর প্রভাব কিডনি সহ কোষ এবং অঙ্গগুলির স্বাভাবিক ক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। যার কারণে কিডনি বিকল হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।

৫. জলশূন্যতায়  Dehydration :

কৃষক, দিনমজুর তারা সহজেই জলশূন্যতায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাদের পর্যাপ্ত জল পান করা উচিত।প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস জল বা তরল(6 লিটার) খাবার খাওয়া উচিত। জল শরীরকে Dehydration (শুষ্কতা) থেকে রক্ষা করে এবং কিডনতে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ গুলো সমেত মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।তবে অতিরিক্ত ঘাম হলে জল খাওয়ার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেলে কিডনিতে পাথর হয় না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে।

কিডনি রোগের লক্ষণ Symptoms of Kidney Disease in Bengali

কিডনি রোগের লক্ষণ গুলি নিচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

১. শরীর অতি ক্লান্ত ও কাজের প্রতি মনোনিবেশ করতে অসুবিধে হয় :

কিডনি সমস্যার অন্যতম প্রধান লক্ষণ হচ্ছে দুর্বলতা। আর এই দুর্বলতা আসে রক্তশূন্যতা থেকে। কিডনি যদি ঠিকমতো কাজ না করতে পারে তাহলে রক্ত ক্রমাগত দূষিত হতে থাকে। যার কারণে রক্তে নতুন করে ব্লাড সেল উত্‍পন্ন হয় না। এছাড়াও কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে তা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন এরিথ্রোপ্রোটিন উত্‍পন্ন করতে পারে না।

কিডনির কার্যকারিতায় মারাত্মক হ্রাসের ফলে রক্তে টক্সিন জমা হতে পারে। এটি মানুষকে ক্লান্ত, দুর্বল করে দেয়। কাজের প্রতি মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে । কিডনি রোগের আরেকটি জটিলতা হল রক্তাল্পতা, যা দুর্বলতা এবং ক্লান্তির কারণ হতে পারে।

২. ঘুমের সমস্যা দেখা যায় :

যখন কিডনি সঠিকভাবে ফিল্টার করছে না, তখন প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে টক্সিন রক্তে থাকে। এটি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় । স্থূলতা এবং দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের মধ্যেও একটি যোগসূত্র রয়েছে । সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্তদের মধ্যে স্লিপ অ্যাপনিয়া বেশি দেখা যায়।

৩. ত্বক ও হাড়ের সমস্যা :

কিডনির অক্ষমতায় শরীরে প্রিউরিটাস দেখা দেয়। প্রিউরিটাস আসলে চুলকানির মেডিক্যাল নাম। শরীরের রক্তে যখন বর্জ্য পদার্থ মিশতে শুরু করে তখন চুলকানির উপসর্গ দেখা দেয় কারণ ওই বর্জ্যের মধ্যে ফসফরাস থাকে। যেসব খাবারে ফসফরাস থাকে যেমন দুধজাতীয় খাবার, সেগুলো হজমের পর ফসফরাস বর্জ্য হিসেবে মূত্রের সাথে বের হতে পারে না। যার কারণে এটি রক্তে মিশে চামড়ায় চুলকানি সৃষ্টি করতে থাকে।

সুস্থ কিডনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। তারা আপনার শরীর থেকে বর্জ্য এবং অতিরিক্ত তরল অপসারণ করে, লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে, হাড়কে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে এবং আপনার রক্তে সঠিক পরিমাণে খনিজ পদার্থ বজায় রাখতে ও কাজ করে। শুষ্ক এবং খসখসে ত্বক হাড়ের রোগের লক্ষণ হতে পারে যা প্রায়শই কিডনি আক্রান্তদের মধ্যে দেখা যায় ।

৪. ঘন ঘন প্রস্রাব প্রবনতা দেখা যায় :

বিশেষ করে রাতের দিকে প্রস্রাবের প্রবনতা দেখা যায়। এটি কিডনি রোগের লক্ষণ হতে পারে। যখন কিডনির ফিল্টার নষ্ট হয়ে যায়, তখন এটি প্রস্রাবের তাগিদ বাড়ায়। কখনও কখনও এটি মূত্রনালীর সংক্রমণ বা পুরুষদের বর্ধিত প্রোস্টেটের লক্ষণও হতে পারে।

৫. প্রস্রাবে সাথে রক্ত ও রঙ পরিবর্তন :

কিডনির সমস্যায় প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। কারণ, কিডনির অক্ষমতায় রেনাল টিউবিউলসের ক্ষতি হয়, যা পলিইউরিয়ার সৃষ্টি করে। কিডনির অক্ষমতা যত বৃদ্ধি পাবে, প্রস্রাবের পরিমাণ ততই কমবে এবং রং গাঢ় হলুদ কিংবা কমলা রং হয়ে যাবে। সেই সাথে প্রস্রাবের সাথে রক্তক্ষরণ এবং অত্যধিক ফেনা হতে পারে।

সুস্থ কিডনি সাধারণত রক্তের কোষগুলি থেকে বর্জ্য ফিল্টার করে প্রস্রাব তৈরি করে, কিন্তু যখন কিডনির ফিল্টার নষ্ট হয়ে যায়, তখন এই রক্ত কোষগুলি প্রস্রাবের মধ্যে “লিক” হতে শুরু করে। কিডনি রোগের লক্ষণ ছাড়াও, প্রস্রাবে টিউমার, কিডনিতে পাথর বা সংক্রমণের ইঙ্গিত হতে পারে।

৬. কখনো কখনো প্রস্রাব ফেনাযুক্ত হয় :

প্রস্রাবের অতিরিক্ত বুদবুদ লক্ষ্য করা যায় ।অর্থাৎ প্রস্রাবে প্রোটিন নির্দেশ করে। ডিম ঝাঁকানোর সময় আপনি যে ফেনা দেখতে পান তার মত দেখতে হতে পারে, যেহেতু প্রস্রাবে পাওয়া সাধারণত প্রোটিন, অ্যালবুমিন, একই প্রোটিন যা ডিমের মধ্যেও পাওয়া যায়।

৭. চোখের চারপাশ ফোলা ও ফুঁসকুড়ি দেখা যায় :

আপনি আপনার চোখের চারপাশে ক্রমাগত ফোলা অনুভব করছেন। প্রস্রাবে প্রোটিন একটি প্রাথমিক লক্ষণ। যখন কিডনির ফিল্টার নষ্ট হয়ে যায় , তখন কিডনি প্রোটিনকে প্রস্রাবে প্রবেশ করতে দেয়। আপনার চোখের চারপাশে ফুসকুড়ি এই কারণে হতে পারে যে আপনার কিডনি শরীরে প্রোটিন রাখার পরিবর্তে প্রস্রাব দিয়ে প্রচুর পরিমাণে লিক করিয়ে দেয় ।

৮. গোড়ালি ও পা ফোলা :

এই রোগের একটি বিশেষ লক্ষণ হলো গোড়ালি এবং পা ফুলে যাওয়া । দুবল হয়ে যাওয়া কিডনির সোডিয়াম ধারণের কার্যকারিতা হ্রাস পায় , যার ফলে আপনার কিডনি সোডিয়ামকে পা এবং গোড়ালিতে জমা করে রাখে। যারফলে পা এবং গোড়ালি ফুলে যায় । নিম্ন প্রান্তে ফোলা হৃদরোগ, যকৃতের রোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী পায়ের শিরা সমস্যার লক্ষণও হতে পারে

৯. ক্ষুধামন্দ হওয়া :

এটি একটি খুব সাধারণ লক্ষণ,শরীরের বর্জ্য পদার্থের আরেকটি উপাদান হচ্ছে অ্যামোনিয়া। যদি অ্যামোনিয়া রক্তে মেশে তাহলে তা শরীরে প্রোটিন নষ্ট করে ফেলে। কিডনির অক্ষমতায় শরীর বর্জ্য হিসেবে অ্যামোনিয়া ফিল্টার করতে পারে না। রক্তে অত্যধিক পরিমাণের অ্যামোনিয়া মুখে অরুচি, ওজন হারানোর মত সমস্যার সৃষ্টি করে।

১০. পেশী ক্র্যাম্পিং/ব্যথা হয় :

পেশী ক্র্যাম্পিং (পেশী খিল ধরা)হওয়ার কারন , ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা কিডনি ফাংশনের ক্ষতি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কম ক্যালসিয়ামের মাত্রা এবং দুর্বলভাবে নিয়ন্ত্রিত ফসফরাস পেশী ক্র্যাম্পিংয়ে অবদান রাখে।

একটি জেনেটিক কন্ডিশনের কারণে শরীরের অভ্যন্তরে, বিশেষ করে কিডনি এবং লিভারে এক ধরনের ফ্লুইড ভর্তি সিস্ট বা গুটির সৃষ্টি হয়। এই সিস্টের মধ্যে থাকা ফ্লুইড এক ধরনের বিশেষ টক্সিন বহন করে, যা শরীরের শিরা বা ধমনী গুলোতে ক্ষতি করতে পারে। একাধিক শিরার বা ধমনীর ক্ষতি হলে তা শরীরে ব্যথা সৃষ্টি করে। সাধারণত এই ব্যথাগুলো শরীরের পেছনের অংশে, পায়ে কিংবা কোমরে হতে পারে।

১১. শ্বাসকষ্টের সমস্যা :

যখন কিডনি কাজ করা বন্ধ করতে শুরু করে, তখন শরীরের বর্জ্য পদার্থ রক্তে মিশতে শুরু করে। এই বর্জ্য পদার্থের বেশিরভাগই হচ্ছে অম্লীয় পদার্থ। তাই এই বর্জ্য যখন রক্তের সাথে ফুসফুসে পৌঁছায় তখন ফুসফুস সেই বর্জ্য বের করার জন্য কার্বনডাই অক্সাইড ব্যবহার করা শুরু করে। যার কারণে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ফুসফুসে ঢুকতে পারে না। এতে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে।

১২. চোখে ঝাপসা দেখা :

কিডনির সমস্যা আপনার চোখে ঝাপসা দেখা কিংবা মানসিক অস্থিরতার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ শরীরের বর্জ্য পদার্থের একটি বড় অংশ হচ্ছে ইউরিয়া। কিডনির সমস্যার কারণে ইউরিয়া শরীর থেকে বের না হয়ে বরং রক্তে মিশে যায়। এই দূষিত রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছে মানসিক অস্থিরতা, ঝাপসা দেখা এই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। যদি ইউরিয়ার পরিমাণ অত্যধিক হয় তাহলে তা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে, যার ফলাফলে রোগী কোমাতে পর্যন্ত চলে যেতে পারেন।

১৩. বমি ভাব ও বমি হওয়া :

রক্তে বর্জ্য পদার্থ বেড়ে যাওয়ায় কিডনি রোগে বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার সমস্যা হতে পারে।

আরো পড়ুন : প্রাকিতিক উপায়ে কমিয়ে ফেলুন কোলেস্টরল। Reduce cholesterol naturally

কিডনি রোগের প্রতিকার Treatment of Kidney Disease in Bengali

প্রাথমিক কিডনি রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় গুলি জেনে নিন।

  • ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপের মতো রোগ যথাসময়ে নির্ণয় করা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে সুনিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
  •  বয়স ৪০ পেরোনোর পর প্রত্যেকেরই উচিত রক্তে শর্করা, রক্তচাপ ও প্রস্রাব ইত্যাদি পরীক্ষা করা।
  • ধূমপান বর্জন করুন। ওজন যেন না বাড়ে। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটুন।
  • খাবারে লবণের পরিমাণ কমান। আমরা প্রতিদিন প্রায় ১০ গ্রামের মতো লবণ খাই, কিন্তু ৬ গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়।
  • অকারণ ওষুধ খাবেন না, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে বা দোকানদারের পরামর্শে তো নয়ই।
  • ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রােগীদের নিয়মিত রক্তের শর্করা এবং প্রস্রাবের অ্যালবুমিন পরীক্ষা করা ও রক্তের হিমােগ্লোবিন এওয়ানসি ( নিয়ন্ত্রণে রাখা ।
  • উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রােগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা ।
  • ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রােগীদের কিডনির কার্যকারিতা প্রতি ৬ মাস অন্তর পরীক্ষা করা ।
  • শিশুদের গলা ব্যথা , জ্বর ও ত্বকে খােস – পাঁচড়ার দ্রুত সঠিক চিকিৎসা করা উচিত । কারণ এগুলাে থেকে কিডনি প্রদাহ বা নেফ্রাইটিস রােগ দেখা দিতে পারে ।
  • ডায়রিয়া , বমি ও রক্ত আমাশয়ের কারণে রক্ত পড়ে ও লবণশূন্য হয়ে কিডনি বিকল হতে পারে । তাই দ্রুত খাবার স্যালাইন খেতে হবে । প্রয়ােজনে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে।

সাধারণ কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়

গবেষণায় দেখা গেছে , কিডনি রােগ প্রতিরােধ করতে ভেষজ ঔষধ বেশি মাত্রায় কাজ করে । যার ফলে এই রােগ দ্রুত নিরাময় সম্ভব হয় । গবেষকরা বলছেন , আপেল উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার । এতে অ্যান্টি – ইনফ্লামেটোরি আছে । যা বাজে কলেস্টেরল দূর করে । এ ছাড়া কিডনি সুস্থ রাখার আরেকটি অন্যতম উপাদান হল পেঁয়াজ । এতে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভােনােয়েড রয়েছে । যা রক্তের চর্বি দূর করে থাকে । এতে কুয়ারসেটিনও আছে । যা হৃদরােগ প্রতিরােধ করে । পেঁয়াজের পটাশিয়াম , প্রােটিন কিডনির জন্য অনেক বেশি উপকারি । প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস জল বা তরল খাবার খাওয়া উচিত ।

আরো পড়ুন: রসুনের বিস্ময়কর উপকারিতা গুলি জেনে রাখা প্রয়োজন Wonderful Benefits of Garlic