কলমি শাকের গুণ তথা কলমি শাকের উপকারিতা গুলি জেনে নিন

কলমি শাকের উপকারিতা

কলমি শাক আঁশজাতীয় একটি খাবার। এতে খাদ্যউপাদান রয়েছে প্রচুর পরিমানে। এটি চোখ ভালো রাখে, হজমে সাহায্য করে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের অনুপাত ঠিক রাখে।

ভর্তা কিংবা ভাজি করে তরকারী হিসেবে খাওয়া হয় এই কলমি শাক। কলমী শাকে রয়েছে অনেক ওষধী গুণ। এরমধ্যে বেশ কিছু গুণের কথা আজ আলোচনা করব।

দামে খুব স্বস্তা অথচ পুষ্টিগুণে অনন্য এমন খাবারের নামের তালিকায় উঠে আসবে কলমি শাকের নাম। কলমি শাক মূলত ভাজি অথবা ঝোল রান্না করে ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়। এছাড়া এই শাক দিয়ে পাকোড়া, বড়া ইত্যাদি তৈরি করে খাওয়া যায়।

আরো পড়ুন হলুদের উপকারিতা পুষ্টি গুণাগুণ ও খাওয়ার নিয়ম

প্রতি ১০০ গ্রাম কলমি শাকের পুষ্টিমান

প্রতি ১০০ গ্রাম কলমি শাকে পাওয়া যায় ২৯ কিলোক্যালোরি, সোডিয়াম ১১৩ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৩১২ মিলিগ্রাম, খাদ্যআঁশ ২.১ গ্রাম, প্রোটিন ৩ গ্রাম, কর্বোহাইড্রেটস ৫.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৫০ মিলিগ্রাম, লৌহ ২.৫ মিলিগ্রাম, জলীয় অংশ ৮৯.৭ গ্রাম।

আরো পড়ুনওটস কি? খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা Benefits Of Oats in Bengali

কলমি শাকের কিছু উপকারিতা

কলমি শাকের উপকারিতা গুলি নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

১. কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে বলে এ শাক হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুদের কলমি শাক খাওয়ালে তাদের আর বাজারের প্রচলিত চটকদার ফুড সাপ্লিমেন্টের দরকার হয় না।

২. কলমি শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে।

৩. কলমি শাক বসন্ত রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।

৪. পর্যাপ্ত পরিমানে লৌহ থাকায় এই শাক রক্ত শূন্যতার রোগীদের জন্য দারুণ উপকারি।

৫. জন্মের পর শিশু মায়ের বুকের দুধ না পেলে মাকে কলমি শাক রান্না করে খাওয়ালে শিশু পর্যাপ্ত পরিমানে দুধ পাবে। Or  বাচ্চারা যদি মায়ের দুধ কম পায় সেইক্ষেত্রে কলমী শাক ছোট মাছ দিয়ে রান্না করে খেলে মায়ের দুধ বাড়বে এবং তখন বাচ্চা দুধ পাবে।

৬. নিয়মিত কলমি শাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। কোষ্ঠ কাঠিন্য বা হলে কলমী শাক তুলে সেচে এক পোয়া পরিমাণ রস করে আখের গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে শরবত বানিয়ে সকাল-বিকাল এক সপ্তাহ খেলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।

৭. যদি কারো ফোড়া এই কলমী পাতা তুলে একটু আদাসহ পাটায় বেটে ফোড়ার চারপাশে লেপে দিয়ে মাঝখানে খালি রাখতে হবে। তিন দিন এইভাবে লেপে দিলে ফোড়া গলে যাবে এবং পুঁজ বেরিয়ে শুকিয়ে যাবে।

৮. বাগি বা ফোড়া উঠলে এই কলমী পাতা বেটে প্রলেপ দিলে বাগি মিশে যাবে।

৯. রাত কানা রোগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কলমী শাক কয়েক সপ্তাহ প্রতিদিন একবেলা ভাজি রান্না করে খেলে রাত কানা রোগ ভালো হয়।

১০.গর্ভাবস্থায় গর্ভবতি মায়েদের শরীরে, হাতে-পায়ে পানি আসে, সেই সময় কলমী শাক বেশি করে রসুন দিয়ে ভেজে তিন সপ্তাহ খেলে পানি কমে যাবে।

১১. গণরিয়া রোগ হলে প্রস্রাবের জায়গায় জ্বালা যন্ত্রণা করে। সেই সময় কলমীর রস করে ৩/৪ চামচ পরিমাণ ৩ সপ্তাহ খেলে ওই জ্বালা কমে যায়।

১২. হাত-পা বা শরীর জ্বালা করলে কলমী শাকের রসের সঙ্গে একটু দুধ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাওয়া যায়।

১৩. পিঁপড়া, মৌমাছি, বিছা বা কোন পোকা-মাকড় কামড়ালে এই কলমী শাকের পাতা ডগাসহ রস করে লাগালে যন্ত্রণা কমে যায়।

১৪. আমাশা হলে কলমী পাতার রসের সঙ্গে আখের গুড় মিশিয়ে শরবত বানিয়ে সকাল-বিকাল নিয়মিত খেলে আমাশার উপশম হয়।

১৫.কলমিশাক চোখের জন্য বিশেষ উপকারী। কলমিশাক দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে।

১৬.কলমি শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যশক্তি থাকায় শারীরিক দুর্বলতা দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। রোগীদেরকে দ্রুত সুস্থ্য হবার জন্য তাই কলমিশাক খাওয়ানো হয়ে থাকে।

১৭.কলমিশাক মূলত আঁশজাতীয় খাবার। তাই শরীরের খাবার দ্রুত  হজমের জন্য কলমিশাক বিশেষ উপকারী।

১৮.কলমি শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে লৌহ থাকায় এই শাক রক্তশূন্যতার রোগীদের জন্য দারুণ উপকারী। সারা দেহে প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ ঠিক রাখতেও এই শাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১৯.মহিলাদের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় সমস্যায় দ্রুত কাজ করে কলমিশাক।

২০.ঋতুশ্রাবের সমস্যা দূরীকরণে কলমি শাক উপকারী ভূমিকা পালন করে।

২১.নিয়মিত কলমি শাক খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কলমি শাকের সঙ্গে আখের গুড় মিশিয়ে শরবত বানিয়ে সকাল-বিকাল এক সপ্তাহ খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। আমাশয় হলেও এ শরবত কাজ করে।

২২.যাদের মাঝে মাঝে বিনা কারণে মাথাব্যথা করার সমস্যা আছে তারা কলমি শাক খেলে উপকার পাবেন।

২৩. অনিদ্রা দূরীকরণেও কলমি শাক খেতে পারেন।

২৪. মাথার খুশকি দুর করতেও কলমি শাক কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

আরো পড়ুননিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা Neem Leaves Benefits And Side Effects

আরো পড়ুনZincovit Tablet এর ব্যবহার, ডোজ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সাবধানতা

আরো পড়ুনথানকুনি পাতার উপকারিতা ও ব্যাবহার Thankuni Patar Upokarita